প্রায় তিন বছর ধরে প্রবাসে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে কাজ করি, এই তিন বছরে একটা জিনিস বুঝতে পারলাম আমাদের দেশী পোলাপান অনেক বেশি ট্যালেন্টেড। কয়েকটা জিনিস যদি একটুখানি ইম্প্রুভ করা যায় নিজেকে আন্তর্জাতিক বিশাল চাকরির বাজারে সহজেই যুক্ত করা যাবে। প্রতিবেশী ভারতীয়দের ক্লাস এইট থেকেই নাকি পোগ্রামিং পড়ানো শুরু করে দেয়। এবং ইংরেজি ভাষা ওদের একটা স্কিল হিসাবে শিখানো হয়। মাধ্যমিক পাশ করতেই করতেই ওদের ছাত্ররা কমুনিকেট করার জন্য এনাফ কনভারসেশন করতে পারে। সেখানে আমরা কেন এত পিছিয়ে?
কমিউনিকেশন, আমরা বাঙ্গালিরা সবচেয়ে বেশি ফেল মারি এই একটা জায়গায়। আমাদের ছেলে-মেয়েরা ট্যাকনিক্যালি অনেক বেশি সাউন্ড এবং স্কিলড। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে আমাদের কমুনিকেশন একেবারেই দুর্বল। প্রধান সমস্যা ল্যাঙ্গুয়েজ ব্যারিয়ার, দ্বিতীয় সমস্যা হচ্ছে রিপোর্টিং তৃতীয় সমস্যা হচ্ছে নিজেকে রিপ্রেজেন্ট না পারা। একটু কষ্ট করে ইংরেজিটা ইম্প্রুভ করতে পারো পুরো পৃথিবীর চাকুরীর বাজার তোমার জন্য ওপেন হয়ে যাবে। তুমি খুব ভাল কোড করো, লিটকোডের সব কঠিন কঠিন সমস্যা সামাধান করে ফেলছো বা দুনিয়ার সেরা প্রবলেম সলভার কিন্তু তুমি যদি কারো সাথে ভালভাবে কমুনিকেট ই না করতে পারো তাহলে কোন লাভ নাই। কমুনিকেট করা মানে এই না যে তোমাকে ইংরেজিতে ফ্লুয়েন্ট হওয়া লাগবে, তোমার জিনিসপত্র ক্লায়েন্ট বা তোমার কলিগকে বুঝাতে পারার জন্য যতটুকুন ইংলিশ দরকার ততটুকু পারলেই যথেষ্ট।
তোমাকে সবার সাথে ভালভাবে কমুনিকেট করা শিখতে হবে। তোমার এবং তোমার কাজের ব্যাপারে তোমার টিম, ম্যানেজার সবাইকে আপডেট রাখতে হবে। এই জিনিসটা হাতে কলমে শিখা লাগবে। ধরো তুমি ডেইলি আপডেট মিটিং এ জয়েন করতে পারবা না, তোমার ডাক্তার আয়পয়েন্টমেন্ট আছে। এই জিনিসটা যতটা আগে সম্ভব তোমার টিমকে জানিয়ে দাও। ভারবালি বললেও জিনিসটা টিম চ্যানেলে লিখে রাখো। ভারবাল জিনিস সবাই সবসময় মনে রাখতে পারে না, এটা একটা প্রুফ বা রিটেন রিপোর্ট হিসাবে থেকে গেল। আবার ধরো তুমি একটা বাগ নিয়ে কাজ করতেছে, দুইদিন ধরে ইনভেস্টিগেট করার পরেও তুমি কুল কিনারা করতে পারতেছ না। এটা তুমি না যে কেউই হতে পারে, এইখানে তোমাকে কমুনিকেট করা লাগবে। যেকোন কাজের শুরুতে টাইম বক্সিং করবা মানে এই সময়ের মধ্যে যদি আমি সমস্যা বুঝতে না পারি অথবা সমাধান বের করতে না পারি তাহলে হেল্প নিব। তোমার অন্য কলিগ যে এই ডোমেইনটা বেশি জানে তার সাথে কথা বলতে পারো। সেও যদি হেল্প করতে না পারে তাহলে প্রিন্সিপাল ইঞ্জিনিয়ার বা যিনি এই ফিচারটা ইমপ্লিমেন্ট করছে তার সাথে কথা বলতে পারো। কার কাছ থেকে কি হেল্প নিতে হবে এবং কাকে বদার করা উচিত না এই জিনিসটাও শিখতে হবে। আরেকটা জিনিস খেয়াল রাখতে হবে যে হেল্প চাইতে চাইতে তুমি সব কিছুতেই অন্যের উপর ডিপেনডেন্ট না হয়ে যাও, এই বদঅভ্যাস ক্যারিয়ারের জন্য বড় হুমকি। পেয়ার পোগ্রামিং বা যেকোন মিটিং এ একটা জিনিস এনশিউর করবা যে তুমি সবার সাথে কমুনিকেট করতেছ, তুমি যেটা বুঝাতে চাঁচ্ছ সেটা অন্যরা ধরতে পারতেছে।
তুমি এক লাইন কোড লিখলেও এইটা কেন লিখছো এইটা সবাইকে বুঝাতে হবে। সবাই তোমার ডোমেন বুঝার কথা না বা তুমি যাদের সাথে ডে-টু-ডে কাজ করবা সবাই ট্যাকনিক্যাল লোকজনও না। তোমার এক লাইনের কোড পরিবর্তনের মাধ্যমে একটা বাগ ফিক্স হয়ে গেল, বা পাঁচ লাইন নতুন কোডের মাধ্যমে নতুন একটা ফিচার যুক্ত হল। কি ফিক্স করলা বা নতুন কি যুক্ত করলা এইটা প্রডাক্ট/সেলস/মার্কেটিং টিম কে বুঝাতে হবে। ওরা এই জিনিসটা কাস্টমারের কাছে সেল করবে, এটাই কর্পোরেট কোম্পানির স্ট্রাটেজি। প্রতিটা কোম্পানিতেই উইকলি ডেমো মিটিং থাকার কথা যেখানে অন্য সবার কাছে তুমি তোমার কাজ প্রেজেন্ট করবা। তোমার কাজকে প্রেজেন্ট করা যায় এইরকম সব সুযোগই নেওয়া উচিত, এতে তোমার ফেস ভ্যালু বাড়বে। মানুষজনের আইডিয়া থাকবে যে he is the go to guy for answering any questions on this domain. মানে তুমি কিছু অউন করো। প্রেজেন্টেশনে অনেকের ভয় থাকে, অনেকের সামনে কিছু বলতে গেলে হাত কাঁপে বা মুখ দিয়ে অন্য কিছু বের হয়ে যায়। আমি বলব তুমি শুরু করো, নিজের ভয়কে দুর করো। তোমার কলিগরা বাঘ-ভাল্লুক না যে তোমাকে খেয়ে ফেলবে, সবার থেকে ফিডব্যাক নিবা যে কেমনে ইম্প্রুভ করা যায়। ছয় মাস পরে তুমি নিজেই আকাশ/পাতাল পার্থক্য দেখতে পাবা।